Sunday 9 March 2014

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ্

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

তাইমিয়াহ  ছিলেন একজন মহিলা আলিমার নাম আর তার বংশধরদের মধ্যেও অনেকেই আলিম হয়েছিলেন; তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত জনের নাম ইবনু তাইমিয়াহ্। এই পরিবারের রয়েছে ইসলামের প্রতি অবদানের অনন্যসাধারণ কাহিনী। একটি উদাহরণই যথেষ্ট। এটি তাতারদের ইরাক আক্রমণের সময়কালে যখন লোকজন বড়সড় আক্রমণের ভয়ে খুব বেশীই স্থান পরিবর্তন করছিলো। আর বাগদাদের ইসলামিক লাইব্রেরি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা তখন মাত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ইবনু তাইমিয়াহ্ ছোট বালক কিন্তু তার বাবা, চাচা, দাদারা তখনি আলিম। তারাও অন্যত্র যাওয়ার জন্য মনস্থির করলেন কিন্তু পরিবারের খুববেশী আসবাব তাদের সাথে নেননি বরং তাদের সমস্ত ইসলামী বইয়ের সংগ্রহশালা একটি মালবাহী গাড়ীতে তুললেন আর তারা নিজ হাতেই তা ঠেলে নিয়ে গেলেন।

এই ছিলো ইবনু তাইমিয়াহর উত্তরাধিকার যা তিনি লাভ করেছিলেন আর তার মাধ্যমে আমরা দ্বীনের জ্ঞান পেয়েছি এই দিন পর্যন্ত। যে বইগুলো ওই মালবাহী গাড়ীর মাধ্যমে রক্ষা করা হয়েছিলো তা ইবনু তাইমিয়াহকে তার জীবদ্দশায় আরো ৫৯১ টি বই লিখতে সহায়তা করেছে তাও মাত্র ৬৭ বছরের জীবনে! মুসলিম বিশ্ব পেয়েছে তার মাধ্যমে ইবনু কাসীর, ইবনুল কায়্যিম জাউযি আর ইমাম আয-যাহাবীর মত আলিমদের। এরা সকলেই ছিলেন তার ছাত্র। এই উত্তরাধিকারই তিনি রেখে গেছেন: জ্ঞান আর জ্ঞানের ধারক আলিম।

মূলতঃ ইবনু তাইমিয়াহ্ খুবই ছোটবেলায় দ্বীন শিক্ষার প্রাথমিক জ্ঞান আর উদ্দীপনা পেয়েছিলেন তার দাদা, বাবা আর চাচার কাছ থেকে। সময় ব্যবস্থাপনার এক স্বতন্ত্র উদাহরণ যেনো তিনি। একবার ইবনু তাইমিয়াহর পিতা ছোট বাচ্চাদের বাগানে নিয়ে গেলেন কিন্তু ছোট তাইমিয়াহ্ বেঁকে বসলেন। যখন তার পিতা ফিরলেন তখন জানালেন এই সময়ের মধ্যে তার একখানি বই মখস্থ করার ছিলো। ইবনু তাইমিয়াহ্ মোট তিনবার কারা নির্বাসনে যান আর তিনবারই তা লোকজনের আর তথাকথিত মুসলিমদের সরকারের নিকট অভিযোগের কারণেই। তার প্রথম কারাবরন ছিলো গৃহবন্দীর ন্যায় যেখানে লোকজন তার সাথে দেখা করতে পারতো। তিনি ফাতাওয়া আর নাসিহা দিতেন; এভাবেই নিজের আখিরাহর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তার হন আর একবছরের মত কারারুদ্ধ থাকেন।

এরই মধ্যে তিনি দেখতে পেলেন লোকজনের আক্বীদা ক্রমশঃ বিকৃত আর বিভিন্ন মিথ্যা ধারনার অনুপ্রবেশ ঘটছে লোকজনের মনমগজে; তখনই তিনি তার অনন্যসাধারণ আক্বীদার বই যা তাওহীদের উপর রচিত:আল-আক্বীদাতুল ওয়াসিতিয়্যাহ্ লিখেন। এই বইটি তিনি লিখা শুরু করেন বা’দ আসর আর মাগরিব নাগাদ শেষ করেন। আপনি যদি এই বইটি পড়েন তবে খেয়াল করে দেখবেন এতে কি পরিমান কুরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে। আর আসর থেকে মাগরিব বড়জোর আড়াই থেকে তিন ঘন্টা সময় আর একটি বই এতো বেশী কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে রচনা কেবল এটাই প্রমান করে তিনি কতো গভীরভাবে কুরআন জানতেন। ইবনু তাইমিয়াহ্ কেবল সত্য সম্পর্কে লিখেই ক্ষ্যন্ত হননি তিনি মিথ্যার মুলোৎপাটন করেছেন তার লেখনীতে ও বক্তব্যে।

ইবনু তাইমিয়াহ্ যখন জেলে মৃত্যুবরণ করেন তখন জেলের মুয়াজ্জিন দেয়াল বেয়ে উঠে তার ঘোষনা দিলেন আর যখন তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো তখন প্রায় তিনলক্ষ লোকের সমাগম হয়েছিলো। খুব দ্রুতই সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছিলো। ইবনু রজব বলেন, তিনি ভ্রমনকারীদের নিকট এমনো সংবাদ পেয়েছেন তার গায়েবানা জানাযা ইয়েমেন ও চায়নায় পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।

সমকালীন পরিভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, ইবনু তাইমিয়াহ্ তার সময়ের অসাধারন সদ্ব্যবহার করেছিলেন; যার মধ্যে ছিলো একই বসায় প্রায় ৬০ পৃষ্ঠার কাছাকাছি মত লেখার সক্ষমতা, তার ছিলো ৩৫ ভলিউমের ফতোয়ার সংগ্রহশালা আর পাশাপাশি একদল শিক্ষার্থীকে একইসাথে তাফসীর, হাদীস, উসুল আত-তাফসীরের মত বিষয়াবলী শিক্ষাদান। তিনি তার কারাবরনকে ইতিবাচকভাবেই নিয়েছিলেন আর সেখানে থাকা অবস্থায় প্রায় আশি বার কুরআন অধ্যয়ন করেন।

ইবনু তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ একাধারে ছিলেন হাফিজ, ফকীহ, মুজতাহিদ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস এবং মুজাহিদ।