Friday 5 December 2014

আল্লাহ্‌র বড়ত্ব


بسم الله الرحمن الرحيم

ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ তার আল-ওয়াবিলুস সায়্যিব গ্রন্থে আমাদের মহান রব আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জালের বড়ত্বের কথা অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছেন এভাবেঃ 

" তিনি সব রাজত্বের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন এবং নিষেধ করছেন এবং রিজিক দিচ্ছেন, মৃত্যু দিচ্ছেন এবং জীবিত করছেন। মর্যাদা দিচ্ছেন এবং অপমানিত করছেন, দিন-রাত্রির আবর্তন ঘটাচ্ছেন, মানুষের মাঝে (সুখ-দুঃখের) দিন ঘুরাচ্ছেন। রাজ্যসমূহ পরিবর্তিত করছেন ফলে কোন রাষ্ট্র রাখছেন আবার কোনটিকে ধ্বংস করে আরেকটি গড়ছেন। তাঁর নির্দেশ আকাশে-বাতাসে সমুদ্রে সর্বত্র বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি সবকিছুকে তার জ্ঞান দ্বারা পরিবেষ্টিত করে রেখেছেন। তাঁর শ্রবণশক্তি সকল কণ্ঠকে ব্যপ্ত করে রেখেছে, তার নিকট এক কণ্ঠস্বর অন্য কণ্ঠস্বরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ঠেকে না, বরং সব ভাষায় সব কথাই তিনি একসাথে শুনতে পাচ্ছেন। তাকে অধিক প্রার্থনা ও যাঞ্চা ভ্রান্তিতে ফেলতে পারে না এবং আকুতি-মিনতিকারীদের কাতরকণ্ঠ তাঁকে বিরক্ত করতে পারে না। তাঁর দৃষ্টিশক্তি সব কিছুই অবলোকন করছে এমনকি কালোপাথরের উপর দিয়ে অন্ধকার কাল পিপীলিকার দল গেলেও তাঁর দৃষ্টি এড়ায় না। সুতরাং অদৃশ্য তাঁর নিকট প্রকাশ্য এবং গোপনীয় বিষয় তাঁর নিকট স্পষ্ট, তিনি গুনাহ মাফ করছেন, বিপদ্গ্রস্থকে উদ্ধার করছেন, দুঃখীকে মুক্ত করছেন, রিক্ত হস্তকে দান করছেন, পথভ্রষ্টকে পথের দিশা দিচ্ছেন, কিংকর্তব্যবিমুঢ়কে চেতনা দিচ্ছেন, ক্ষুধার্থকে খাবার দিচ্ছেন, উলঙ্গকে বস্ত্র দান করছেন, পীড়িতকে আরোগ্য দান করছেন, তওবাকারীর তওবা কবুল করছেন, সৎকাজকারীকে প্রতিদান দিচ্ছেন এবং মজলুমকে সাহায্য করছেন আর অত্যাচারীকে পদানত করছেন। সম্মানীর সম্মান রক্ষা করছেন এবং আশ্রয়হীনকে নিরাপত্তা দান করছেন। তিনি বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর উত্থান ঘটাচ্ছেন আবার কিছু জাতিকে ধ্বংস করছেন... যদি আকাশ ও জমিনের পূর্বের ও পরের মানুষ এবং জিন সকলেই তাঁর অনুগত বান্দা হয়ে যায় তাহলে তাঁর রাজত্ব সামান্যতম বৃদ্ধি পাবে না। আর যদি পূর্বের এবং পরের সমস্ত মানব ও দানব তাঁর অবাধ্য হয়ে যায় তাহলেও তাঁর রাজত্বে সামান্যতম ঘাটতি হবে না। দুনিয়া ও আকাশের সমস্ত মানুষ ও জিন জীবিত ও মৃত সকলেই যদি কোথাও একত্রিত হয়ে তাঁর নিকট প্রার্থনা করে এবং তিনি প্রত্যেককে তার প্রার্থিত বস্তু দান করেন তাহলে তাঁর ভাণ্ডার থেকে সামান্যতম জিনিসও কমবে না। তিনিই প্রথম, যার পূর্বে আর কেউ নেই। তিনিই প্রকাশ্য যার উপরে আর কেউ নেই এবং তিনিই অপ্রকাশ্য যার পিছনে আর কেউ নেই। তিনিই বরকতময়, যার ভাণ্ডার হতে কোন কিছু ঘাটতি হবে না। যার কোন শরীক নেই, নেই কোন প্রতিপক্ষ, যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সৃষ্টিকূলে যার কোন তুলনা হয় না। সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে একমাত্র তাঁর রাজত্ব ব্যতীত। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কারো আনুগত্য নেই। কেউ তাঁর জ্ঞানের বাহিরে অন্যায় করতে পারে না। কেউ আনুগত্য করলে তিনি খুশী হন, পাপ করলে ক্ষমা করে দেন। তাঁর পক্ষ থেকে প্রতিশোধ হলো ইনসাফ স্বরূপ। তাঁর প্রতিটি নিয়ামত রহমত স্বরূপ। তিনি সবার হিফাজতকারী, যা ইচ্ছা তাই করেন। ["তিনি কোন কিছু ইচ্ছা করলে বলেন, হয়ে যাও, তখনই তা হয়ে যায়।" - সুরা ইয়াসিনঃ৮২]" 

( আল-ওয়াবিলুস সায়্যিব, পৃষ্ঠাঃ ১২৫ ) 
                                             


"আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।" [সুরা বাকারাহঃ ২৫৫]  

"তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।"  [সুরা হাদীদঃ০৩] 

"তিনিই আল্লাহ তা’আলা, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্নøশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ তা’আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।" [সুরা হাশরঃ ২২-২৪]  

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

"যখন আল্লাহ্‌ আসমানে কোন নির্দেশ জারি করেন তখন ফিরিশতাকূল আল্লাহ্‌র ভয়ে বিনয়ী হয়ে পাখা নাড়তে থাকে যেন তারা লোহার শিকলে পাথরে বাঁধা রয়েছেন, যখন তাদের অন্তঃকরণ থেকে ভয় বিদূরিত হয় তখন তারা বলে আপনাদের প্রভু কি বলেছেন, তারা বলে তিনি অবশ্যই সত্য বলেছেন। তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান।"  [ বুখারিঃ হাদিস নং- ৪০৪৩] 


 "তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে বোঝেনি। কেয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আসমান সমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে। তিনি পবিত্র। আর এরা যাকে শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে।" [সুরা আয-যুমারঃ৬৭]

    
[ সালিহ আল-মুনাজ্জিদের 'ঈমানী দুর্বলতা' বই থেকে, অনুবাদকঃ শামাউন আলি] 

Sunday 9 March 2014

শাইখুল ইসলাম ইবনু তাইমিয়াহ্

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

তাইমিয়াহ  ছিলেন একজন মহিলা আলিমার নাম আর তার বংশধরদের মধ্যেও অনেকেই আলিম হয়েছিলেন; তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত জনের নাম ইবনু তাইমিয়াহ্। এই পরিবারের রয়েছে ইসলামের প্রতি অবদানের অনন্যসাধারণ কাহিনী। একটি উদাহরণই যথেষ্ট। এটি তাতারদের ইরাক আক্রমণের সময়কালে যখন লোকজন বড়সড় আক্রমণের ভয়ে খুব বেশীই স্থান পরিবর্তন করছিলো। আর বাগদাদের ইসলামিক লাইব্রেরি পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনা তখন মাত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ইবনু তাইমিয়াহ্ ছোট বালক কিন্তু তার বাবা, চাচা, দাদারা তখনি আলিম। তারাও অন্যত্র যাওয়ার জন্য মনস্থির করলেন কিন্তু পরিবারের খুববেশী আসবাব তাদের সাথে নেননি বরং তাদের সমস্ত ইসলামী বইয়ের সংগ্রহশালা একটি মালবাহী গাড়ীতে তুললেন আর তারা নিজ হাতেই তা ঠেলে নিয়ে গেলেন।

এই ছিলো ইবনু তাইমিয়াহর উত্তরাধিকার যা তিনি লাভ করেছিলেন আর তার মাধ্যমে আমরা দ্বীনের জ্ঞান পেয়েছি এই দিন পর্যন্ত। যে বইগুলো ওই মালবাহী গাড়ীর মাধ্যমে রক্ষা করা হয়েছিলো তা ইবনু তাইমিয়াহকে তার জীবদ্দশায় আরো ৫৯১ টি বই লিখতে সহায়তা করেছে তাও মাত্র ৬৭ বছরের জীবনে! মুসলিম বিশ্ব পেয়েছে তার মাধ্যমে ইবনু কাসীর, ইবনুল কায়্যিম জাউযি আর ইমাম আয-যাহাবীর মত আলিমদের। এরা সকলেই ছিলেন তার ছাত্র। এই উত্তরাধিকারই তিনি রেখে গেছেন: জ্ঞান আর জ্ঞানের ধারক আলিম।

মূলতঃ ইবনু তাইমিয়াহ্ খুবই ছোটবেলায় দ্বীন শিক্ষার প্রাথমিক জ্ঞান আর উদ্দীপনা পেয়েছিলেন তার দাদা, বাবা আর চাচার কাছ থেকে। সময় ব্যবস্থাপনার এক স্বতন্ত্র উদাহরণ যেনো তিনি। একবার ইবনু তাইমিয়াহর পিতা ছোট বাচ্চাদের বাগানে নিয়ে গেলেন কিন্তু ছোট তাইমিয়াহ্ বেঁকে বসলেন। যখন তার পিতা ফিরলেন তখন জানালেন এই সময়ের মধ্যে তার একখানি বই মখস্থ করার ছিলো। ইবনু তাইমিয়াহ্ মোট তিনবার কারা নির্বাসনে যান আর তিনবারই তা লোকজনের আর তথাকথিত মুসলিমদের সরকারের নিকট অভিযোগের কারণেই। তার প্রথম কারাবরন ছিলো গৃহবন্দীর ন্যায় যেখানে লোকজন তার সাথে দেখা করতে পারতো। তিনি ফাতাওয়া আর নাসিহা দিতেন; এভাবেই নিজের আখিরাহর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার গ্রেপ্তার হন আর একবছরের মত কারারুদ্ধ থাকেন।

এরই মধ্যে তিনি দেখতে পেলেন লোকজনের আক্বীদা ক্রমশঃ বিকৃত আর বিভিন্ন মিথ্যা ধারনার অনুপ্রবেশ ঘটছে লোকজনের মনমগজে; তখনই তিনি তার অনন্যসাধারণ আক্বীদার বই যা তাওহীদের উপর রচিত:আল-আক্বীদাতুল ওয়াসিতিয়্যাহ্ লিখেন। এই বইটি তিনি লিখা শুরু করেন বা’দ আসর আর মাগরিব নাগাদ শেষ করেন। আপনি যদি এই বইটি পড়েন তবে খেয়াল করে দেখবেন এতে কি পরিমান কুরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি রয়েছে বিভিন্ন বিষয়ে। আর আসর থেকে মাগরিব বড়জোর আড়াই থেকে তিন ঘন্টা সময় আর একটি বই এতো বেশী কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে রচনা কেবল এটাই প্রমান করে তিনি কতো গভীরভাবে কুরআন জানতেন। ইবনু তাইমিয়াহ্ কেবল সত্য সম্পর্কে লিখেই ক্ষ্যন্ত হননি তিনি মিথ্যার মুলোৎপাটন করেছেন তার লেখনীতে ও বক্তব্যে।

ইবনু তাইমিয়াহ্ যখন জেলে মৃত্যুবরণ করেন তখন জেলের মুয়াজ্জিন দেয়াল বেয়ে উঠে তার ঘোষনা দিলেন আর যখন তার জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো তখন প্রায় তিনলক্ষ লোকের সমাগম হয়েছিলো। খুব দ্রুতই সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছিলো। ইবনু রজব বলেন, তিনি ভ্রমনকারীদের নিকট এমনো সংবাদ পেয়েছেন তার গায়েবানা জানাযা ইয়েমেন ও চায়নায় পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়েছিলো।

সমকালীন পরিভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, ইবনু তাইমিয়াহ্ তার সময়ের অসাধারন সদ্ব্যবহার করেছিলেন; যার মধ্যে ছিলো একই বসায় প্রায় ৬০ পৃষ্ঠার কাছাকাছি মত লেখার সক্ষমতা, তার ছিলো ৩৫ ভলিউমের ফতোয়ার সংগ্রহশালা আর পাশাপাশি একদল শিক্ষার্থীকে একইসাথে তাফসীর, হাদীস, উসুল আত-তাফসীরের মত বিষয়াবলী শিক্ষাদান। তিনি তার কারাবরনকে ইতিবাচকভাবেই নিয়েছিলেন আর সেখানে থাকা অবস্থায় প্রায় আশি বার কুরআন অধ্যয়ন করেন।

ইবনু তাইমিয়াহ রহিমাহুল্লাহ একাধারে ছিলেন হাফিজ, ফকীহ, মুজতাহিদ, মুফাসসির, মুহাদ্দিস এবং মুজাহিদ।

Tuesday 11 February 2014

ইহসান

بسم الله الرحمن الرحيم

الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ

”যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।  “ [সুরা মুলক: ৩]

এই আয়াহ’য় উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের মধ্যে কে সর্বোত্তমভাবে কর্মসম্পাদনকারী তা তিনি পরীক্ষা করেন। আর এখানে ব্যবহৃত أَحْسَنُ عَمَلًا ‘র ব্যবহারে তাই প্রতীয়মান হয়; এখানে বলা হয়নি “আকছারু আ’মালা” অর্থ্যাৎ অধিক কর্মসম্পাদনকারী। এখানে ইবাদাহ্’র পরিমাণের চেয়ে গুণগত মানকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আ’মালের মধ্যে সর্বোত্তম। মুহাম্মদ বিন আজলান এর মতও এটাই। এটা খেয়াল রাখতে হবে যে, আল্লাহ্ তা’আলা বলেননি, “তোমাদের মধ্যে কে বেশী কর্মসম্পাদনকারী”? এরপরেই আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,”তিনি পরাক্রমশালী, দয়ালু”। এখানে আল্লাহ্’র পরাক্রমশালীতার পাশাপাশি ক্ষমার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।


 অন্যত্র একটি আয়াত এসেছে:

إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا

"আমি পৃথিবীস্থ সব কিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা করি যে, তাদের মধ্যে কে ভাল কাজ করে।" [সুরা কাহফ:০৭]   

অনুরুপভাবে আমরা হাদীসে জিবরীলে দেখি ইহসানের সংজ্ঞা:

قَالَ: مَا الإِحْسَانُ؟
قَالَ: «  ( يَرَاكَ» )أَنْ تَعْبُدَ اللَّهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ، فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ
[صحيح البخاري]


"তারপর বললেন, আমাকে ইহসান সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ইহসান হলো, এমনভাবে ইবাদত-বন্দেগী করবে যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি তুমি তাকে না ও দেখ, তাহলে ভাববে তিনি তো আমাকে দেখছেন।" [সহীহ মুসলিম, ইফাবা, হাদীস নং-০১]

আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে ইহসানের স্তরে উন্নীত করুন। আমীন।


Sunday 26 January 2014

দ্বীন হচ্ছে নাসিহা

                                                بسم الله الرحمن الرحيم




আবু রুকাইয়াহ তামিম ইবনু আওস আদ-দারী [রাযীঃ] হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ দ্বীন হচ্ছে উপদেশ। আমরা বললাম, কার জন্য? তিনি বলেনঃ আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য, মুসলিমদের নেতা [ইমাম] এবং সমস্ত মুসলিমদের জন্য। [মুসলিমঃ হাঃ ৫৫]

আমাদের এই হাদিসটি অত্যন্ত গভীরভাবে উপলব্ধি করা দরকার কেননা ইসলামে নাসিহার গুরুত্ব অপরিসীম; এমনকি মুহাম্মাদ বিন আসলাম এই হাদিসকে বলেছেন দ্বীনের এক-চতুর্থাংশ।  

কিন্তু, আমরা এটা কতটুকু মনে রাখি? এই ব্যাপারে একজন আলিমের সমালোচনার ধরন তুলে ধরব যাতে আমরা শিক্ষা গ্রহন করতে পারি, ইন শা আল্লাহু তাআলা।

একবার এক ব্যক্তি এসে একজন আলিম পর্যায়ের ব্যক্তির কাছে অন্য এক ব্যক্তির ব্যপারে অভিযোগ করলো, যে সে ব্যক্তি কম্যুনিটিতে ফিতনা সৃষ্টি করছে। তখন, ঐ আলিম ব্যক্তি গীবাত আর অপবাদের সতর্কতা দেখিয়ে অভিযোগকারী ব্যক্তিকে বলল, “ঐ ব্যক্তি তাঁর নিজের প্রতি অবিচার করছে।”

দেখুন তাঁর প্রজ্ঞা। একজন ব্যক্তি যখন ফিতনা তৈরি করে তখন সবার আগে সে কাকে হতাশ করে তাঁর নিজেকেই; হয়তো উপলব্ধি ব্যতিরেকে। এরপর তিনি ব্যপারটি নিয়ে কথা বললেন। সুবহান’আল্লাহ।

কিন্তু, এসব ব্যাপারে আমরা কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাই। আমরা খুব সহজেই বিচার করে বসি; ঐ ব্যক্তির জন্য কোন সমবেদনা প্রকাশ না করে। যা নাসিহাকে পুরোপুরি অর্থহীন করে দেয়। অথচ যে ব্যক্তিকে উপদেশ দেয়া হল, তাকে উপদেশ দেয়ার পাশাপাশি দুয়া ও করা উচিত।

আমাদের ভাবা উচিত, আমরা কি নাসিহা [সদুপদেশ] দিচ্ছি নাকি তিরষ্কার করছি?

নাসিহা আর তিরস্কারের মধ্যে পার্থক্য হল, নাসিহা হল সে উপদেশ; এই উপদেশ যাকে দেয়া হচ্ছে তার প্রতি থাকে মঙ্গলকামিতা, থাকে রাহমা আর সহমর্মিতা আর সেই উপদেশদাতা কামনা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন আর তার সৃষ্টির কল্যাণ। তাই সে তাকে চরম বিনয়ী আর এমনকি নিজেকে প্রস্তুত করে সমুহ ক্ষতি কিংবা অপবাদের গ্লানির জন্য ও। অপর দিকে যে তিরস্কার করে সে সন্মুখ সমরেই সবকিছু বলে আর অপদস্থ করে। সে যাকে তিরস্কার করছে সে ব্যক্তিকে খাট করতে চায় এবং উপদেশের নামে অভিশাপ দেয়।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের হিদায়ার জন্য এত বেশী কাতর ছিলেন যে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা ওয়াহির মাধ্যমে জানালেনঃ

“যদি তারা এই বিষয়বস্তুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করে, তবে তাদের পশ্চাতে সম্ভবতঃ আপনি পরিতাপ করতে করতে নিজের প্রাণ নিপাত করবেন।“ [সুরা কাহফঃ০৬]

আল্লাহু আকবার।

এছাড়া ও সালাফদের মধ্যে হাসান আল বাসরির নাসিহার কথা সুবিদিত। একজন সালাফ বলেছিলেন, এখন আর হাসান আল বাসরির মত কেউ নাই যে শাসকদের নাসিহা দিবেন।

সুতরাং, আমাদের সব সময় নাসীহা দেয়ার ক্ষেত্রে সহমর্মিতা আর সমবেদনা বজায় থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে । আল্লাহ আমাদের তাওফিক দিন। আমীন। 

سبحانك اللهم و بحمدك أشهد أن لا إله إلا أنت أستغفرك و أتوب إليك