Saturday 20 October 2012

Being true with Allaah - আল্লাহ'র সাথে সত্যনিষ্ঠ হওয়া: ["الصدق مع الله"]


بسم الله الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله


وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاء وَيُقِيمُوا الصَّلَاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ

”তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।“ [সুরা বাইয়্যিনাহ্: ০৫]

সালাফরা সকল কাজ যা মহৎ তাতে আমাদের ছাড়িয়ে গেছেন, তবে  একটি সর্বোত্তম মহৎ গুণ যার শীর্ষে তারা আরোহন করেছিলেন, আর তা হলো ‘আল্লাহ’র সাথে সত্যনিষ্ঠ হওয়া’ ["الصدق مع الله"] আর এই গুণটির ঘাটতিই আমাদের মাঝে সবচেয়ে বেশী।

সালাফরা বলতেন, “ও আল্লাহ্! আমাদের অন্তঃকরনকে আমাদের বাহ্যিক অবস্থার চেয়ে উত্তম কর এবং আমাদের বাহ্যিক অবস্থা ভাল কর।”

“ইমাম আহমাদ [رحمة الله عليه] যখন পথ ধরে হাটতেন , তখন তিনি শ্রমিকদের মধ্যে হাঁটতেন যাতে কেউ তাকে শ্রদ্ধাবশতঃ নির্দেশ না করে এবং যাতে লোকজন মনে করে তিনিও একজন শ্রমিক বৈ আর কেউ নয়; আর তাকে শ্রদ্ধাবশতঃ নির্দেশ করা থেকে বিরত থাকে।

তাদের মধ্যে কেউ যখন জিহাদে প্রবেশ করতেন , নিজেকে ছদ্মাবেশে ঢেকে নিতেন আর তিনি যদি  প্রচুর গণীমাহ্ লাভ করতেন তবে তিনি তার পরিচয় গোপন করতেন আর তা পরিত্যক্ত রেখে চলে যেতেন যাতে লোকজন জানতে না পারে, কে তা অর্জন করেছে।“


মাসলামাহ্ বিন আবদ আল-মালিক [رضي الله عنه] একটি দুর্গ দীর্ঘ সময় ধরে অবরুদ্ধ রেখেছিলেন। একদিন রাত্রিকালীন সময়ে, একজন মুজাহিদীন খুব ধীরে ধীরে নিঃশব্দে দুর্গের দেয়াল বেয়ে উঠে পড়লেন আর প্রহরীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন, তাদের সবাইকে হত্যা করলেন এবং দুর্গে একটি গর্ত খনন করলেন যার ভিতর দিয়ে মুসলিম সৈন্যরা প্রবেশ করলো এবং দুর্গের কতৃত্ব লাভ করলো।
অতঃপর, মাসলামাহ্ [رضي الله عنه] বেশ কিছু সময় ধরে জানতে চাইলেন: “তোমাদের মধ্যে কে এই গর্ত খুড়েছ”?

কেউ এগিয়ে এল না। একদিন রাতে, একজন আবিষ্ট অশ্বারোহী মাসলামা’র তাবুতে প্রবেশ করে বললো: “তুমি কি জানতে চাও কে গর্তটি খুড়েছিলো?”
মাসলামা বললেন: “হ্যা”।
অশ্বারোহী উত্তর দিলেন: “আমি আপনাকে এই শর্তে বলতে পারি যে আপনি কাউকে তার নাম বলবেন না আর তাকে এইজন্য কোন পুরষ্কার কিংবা ক্ষতিপূরণ দিবেন না।”
তিনি বললেন: “হ্যা”।

সে বললো: “আমিই সে যে গর্তটি খুড়েছিল” এবং তার নাম উন্মোচন না করেই দ্রুত সওয়ার হলো।
অতঃপর, যখনই কিবলামুখী হয়ে দুআ করতেন তখনই তিনি বলতেন:
“ও আল্লাহ্! আমাকে পুনরুত্থানের দিন একত্রিত করো  তার সাথে যে গর্ত খুড়েছিলো। ”


আবদুল্লাহ্ ইবন মাস’ঊদের [رضي الله عنه] উক্তি হতে ইবনুল কায়্যিম
 [ رحمة الله عليه]  বর্ণনা করেন:

আবদুল্লাহ্ ইবন মাস’ঊদের [رضي الله عنه] সাহচর্যে এক ব্যক্তি বলেন:
”আমি ডানহস্তের সঙ্গীদের অন্তর্ভুক্ত হতে চাই না, আমি আল্লাহ’র নিকটবর্তীদের [মুকাররাবুন] অন্তর্ভুক্ত হতে চাই ।“

তখন আবদুল্লাহ্ বললেন:
“কিন্তু, এ ব্যক্তি যে আশা করে মৃত্যুর পরে সে পুনরূত্থিত না হোক [আল্লাহ’র ভয়ে]”। [নিজের কথা বুঝালেন।]

একদিন তিনি ঘর থেকে বের হলেন এবং লোকজন তাকে অনুসরন করলো, তখন তিনি বললেন: ”তোমাদের কি কিছু প্রয়োজন আছে?”

তারা বললো: “না, কিন্তু আমরা আপনার সাথে হাটতে চাই।”
তিনি বললেন: “ফিরে যাও, কেননা তা অনুসরনকারীর জন্য অসম্মানের আর অনুসৃতের জন্য ফিতনাহ্।”

তিনি আরো বললেন:”তোমরা যদি তা জানতে যা আমি নিজের সন্মন্ধে জানি, তবে তোমরা আমার মাথায় ধুলি নিক্ষেপ করতে।”

“তোমরা দ্বীনের ব্যাপারে অন্য ব্যক্তির তাকলীদ [অন্ধ অনুসরন] করবে না, কেননা সে [যার অনুসরন করা হয়] যদি বিশ্বাস করে তবে সে [অনুসারী] বিশ্বাস করে আর সে যদি অবিশ্বাস করে, তবে সে অবিশ্বাস করে। যদি তোমাদের কাউকে অন্ধভাবে অনুসরন করতে হয় তবে তাদের অনুসরন কর যারা উদাহরন হিসেবে মৃত্যুবরন করেছেন, নিশ্চয়ই যারা জীবিত তারা ফিতনাহ্ থেকে নিরাপদ নয়।“


নিজের অন্তরকে এই তিন জায়গায় পর্যবেক্ষন কর:
-যখন তুমি কুরআন শ্রবন কর,
-যেখানে আল্লাহ’র নাম স্মরণ করা হয়,
-যখন তুমি একাকী থাক।
যদি তুমি এইসব জায়গায় একে [ বিনম্র ] না পাও, তবে আল্লাহ’র কাছে প্রার্থনা কর যেনো তিনি তোমাকে অন্তর দান করেন; নিশ্চয়ই তোমার কোন অন্তর নেই।
[আল ফাওয়ায়িদ: পৃ:১৬২]

আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:
‘নিশ্চয় যারা তাদের পালনকর্তার ভয়ে সন্ত্রস্ত,
যারা তাদের পালনকর্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করে,
যারা তাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করে না
এবং যারা যা দান করবার, তা ভীত, কম্পিত হৃদয়ে এ কারণে দান করে যে, তারা তাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তন করবে,
তারাই কল্যাণ দ্রুত অর্জন করে এবং তারা তাতে অগ্রগামী।“
[সুরা মু’মিনুন: ৫৭-৬২]

আয়িশা [رضي الله عنه] হতে বর্ণিত , তিনি বলেন : রাসূল (صلى الله عليه وسلم)
কে জিজ্ঞেস করেছিলাম এ আয়াতটি কি মদপানকারী, ব্যভিচারী ও চোরদের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে? তিনি বলেন: না, হে সিদ্দিকের মেয়ে! বরং তারা হলো রোজাদার, ছ্বলাত কায়েমকারী ও দানকারীগণ, কিন্তু তারা ভয় করে যে হয়তো বা কবুল করা হবে না ! তারাই তো কল্যাণের প্রতি অগ্রগামী। [সহীহ তিরমিযী]

আর সালাফদের এই ধরনের সত্যনিষ্ঠতার উদাহরণ টানতে গেলে বৃহদাকার পুস্তকের সমারোহ হবে।
আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের সালাফদের এই অনন্য গুণাবলী রপ্ত করার তাওফীক দিন। আর দ্বীনকে পরিপূর্ণভাবে তার জন্য নির্দিষ্ট করার তাওফীক দিন।আমীন।

سبحانك اللهم و بحمدك أشهد أن لا إله إلا أنت أستغفرك و أتوب إليك



No comments:

Post a Comment