Friday 5 December 2014

আল্লাহ্‌র বড়ত্ব


بسم الله الرحمن الرحيم

ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ তার আল-ওয়াবিলুস সায়্যিব গ্রন্থে আমাদের মহান রব আল্লাহ্‌ আজ্জা ওয়া জালের বড়ত্বের কথা অত্যন্ত প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরেছেন এভাবেঃ 

" তিনি সব রাজত্বের কাজকর্ম পর্যবেক্ষণ করছেন, নির্দেশ দিচ্ছেন এবং নিষেধ করছেন এবং রিজিক দিচ্ছেন, মৃত্যু দিচ্ছেন এবং জীবিত করছেন। মর্যাদা দিচ্ছেন এবং অপমানিত করছেন, দিন-রাত্রির আবর্তন ঘটাচ্ছেন, মানুষের মাঝে (সুখ-দুঃখের) দিন ঘুরাচ্ছেন। রাজ্যসমূহ পরিবর্তিত করছেন ফলে কোন রাষ্ট্র রাখছেন আবার কোনটিকে ধ্বংস করে আরেকটি গড়ছেন। তাঁর নির্দেশ আকাশে-বাতাসে সমুদ্রে সর্বত্র বাস্তবায়িত হচ্ছে। তিনি সবকিছুকে তার জ্ঞান দ্বারা পরিবেষ্টিত করে রেখেছেন। তাঁর শ্রবণশক্তি সকল কণ্ঠকে ব্যপ্ত করে রেখেছে, তার নিকট এক কণ্ঠস্বর অন্য কণ্ঠস্বরের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ ঠেকে না, বরং সব ভাষায় সব কথাই তিনি একসাথে শুনতে পাচ্ছেন। তাকে অধিক প্রার্থনা ও যাঞ্চা ভ্রান্তিতে ফেলতে পারে না এবং আকুতি-মিনতিকারীদের কাতরকণ্ঠ তাঁকে বিরক্ত করতে পারে না। তাঁর দৃষ্টিশক্তি সব কিছুই অবলোকন করছে এমনকি কালোপাথরের উপর দিয়ে অন্ধকার কাল পিপীলিকার দল গেলেও তাঁর দৃষ্টি এড়ায় না। সুতরাং অদৃশ্য তাঁর নিকট প্রকাশ্য এবং গোপনীয় বিষয় তাঁর নিকট স্পষ্ট, তিনি গুনাহ মাফ করছেন, বিপদ্গ্রস্থকে উদ্ধার করছেন, দুঃখীকে মুক্ত করছেন, রিক্ত হস্তকে দান করছেন, পথভ্রষ্টকে পথের দিশা দিচ্ছেন, কিংকর্তব্যবিমুঢ়কে চেতনা দিচ্ছেন, ক্ষুধার্থকে খাবার দিচ্ছেন, উলঙ্গকে বস্ত্র দান করছেন, পীড়িতকে আরোগ্য দান করছেন, তওবাকারীর তওবা কবুল করছেন, সৎকাজকারীকে প্রতিদান দিচ্ছেন এবং মজলুমকে সাহায্য করছেন আর অত্যাচারীকে পদানত করছেন। সম্মানীর সম্মান রক্ষা করছেন এবং আশ্রয়হীনকে নিরাপত্তা দান করছেন। তিনি বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর উত্থান ঘটাচ্ছেন আবার কিছু জাতিকে ধ্বংস করছেন... যদি আকাশ ও জমিনের পূর্বের ও পরের মানুষ এবং জিন সকলেই তাঁর অনুগত বান্দা হয়ে যায় তাহলে তাঁর রাজত্ব সামান্যতম বৃদ্ধি পাবে না। আর যদি পূর্বের এবং পরের সমস্ত মানব ও দানব তাঁর অবাধ্য হয়ে যায় তাহলেও তাঁর রাজত্বে সামান্যতম ঘাটতি হবে না। দুনিয়া ও আকাশের সমস্ত মানুষ ও জিন জীবিত ও মৃত সকলেই যদি কোথাও একত্রিত হয়ে তাঁর নিকট প্রার্থনা করে এবং তিনি প্রত্যেককে তার প্রার্থিত বস্তু দান করেন তাহলে তাঁর ভাণ্ডার থেকে সামান্যতম জিনিসও কমবে না। তিনিই প্রথম, যার পূর্বে আর কেউ নেই। তিনিই প্রকাশ্য যার উপরে আর কেউ নেই এবং তিনিই অপ্রকাশ্য যার পিছনে আর কেউ নেই। তিনিই বরকতময়, যার ভাণ্ডার হতে কোন কিছু ঘাটতি হবে না। যার কোন শরীক নেই, নেই কোন প্রতিপক্ষ, যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, সৃষ্টিকূলে যার কোন তুলনা হয় না। সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে একমাত্র তাঁর রাজত্ব ব্যতীত। তাঁর অনুমতি ব্যতীত কারো আনুগত্য নেই। কেউ তাঁর জ্ঞানের বাহিরে অন্যায় করতে পারে না। কেউ আনুগত্য করলে তিনি খুশী হন, পাপ করলে ক্ষমা করে দেন। তাঁর পক্ষ থেকে প্রতিশোধ হলো ইনসাফ স্বরূপ। তাঁর প্রতিটি নিয়ামত রহমত স্বরূপ। তিনি সবার হিফাজতকারী, যা ইচ্ছা তাই করেন। ["তিনি কোন কিছু ইচ্ছা করলে বলেন, হয়ে যাও, তখনই তা হয়ে যায়।" - সুরা ইয়াসিনঃ৮২]" 

( আল-ওয়াবিলুস সায়্যিব, পৃষ্ঠাঃ ১২৫ ) 
                                             


"আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন উপাস্য নেই, তিনি জীবিত, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রাও স্পর্শ করতে পারে না এবং নিদ্রাও নয়। আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ এমন, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পিছনে যা কিছু রয়েছে সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোন কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর সিংহাসন সমস্ত আসমান ও যমীনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।" [সুরা বাকারাহঃ ২৫৫]  

"তিনিই প্রথম, তিনিই সর্বশেষ, তিনিই প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান এবং তিনি সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত।"  [সুরা হাদীদঃ০৩] 

"তিনিই আল্লাহ তা’আলা, তিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই; তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যকে জানেন তিনি পরম দয়ালু, অসীম দাতা। তিনিই আল্লাহ তিনি ব্যতিত কোন উপাস্য নেই। তিনিই একমাত্র মালিক, পবিত্র, শান্তি ও নিরাপত্তাদাতা, আশ্রয়দাতা, পরাক্রান্ত, প্রতাপান্বিত, মাহাত্নøশীল। তারা যাকে অংশীদার করে আল্লাহ তা’ আলা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ তা’আলা, স্রষ্টা, উদ্ভাবক, রূপদাতা, উত্তম নাম সমূহ তাঁরই। নভোমন্ডলে ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করে। তিনি পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়।" [সুরা হাশরঃ ২২-২৪]  

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

"যখন আল্লাহ্‌ আসমানে কোন নির্দেশ জারি করেন তখন ফিরিশতাকূল আল্লাহ্‌র ভয়ে বিনয়ী হয়ে পাখা নাড়তে থাকে যেন তারা লোহার শিকলে পাথরে বাঁধা রয়েছেন, যখন তাদের অন্তঃকরণ থেকে ভয় বিদূরিত হয় তখন তারা বলে আপনাদের প্রভু কি বলেছেন, তারা বলে তিনি অবশ্যই সত্য বলেছেন। তিনি সর্বোচ্চ ও সুমহান।"  [ বুখারিঃ হাদিস নং- ৪০৪৩] 


 "তারা আল্লাহকে যথার্থরূপে বোঝেনি। কেয়ামতের দিন গোটা পৃথিবী থাকবে তাঁর হাতের মুঠোতে এবং আসমান সমূহ ভাঁজ করা অবস্থায় থাকবে তাঁর ডান হাতে। তিনি পবিত্র। আর এরা যাকে শরীক করে, তা থেকে তিনি অনেক উর্ধ্বে।" [সুরা আয-যুমারঃ৬৭]

    
[ সালিহ আল-মুনাজ্জিদের 'ঈমানী দুর্বলতা' বই থেকে, অনুবাদকঃ শামাউন আলি] 

No comments:

Post a Comment