Saturday 25 May 2013

আত্ম-শৃংখলার পথে

بسم الله الرحمن الرحيم


সকল প্রশংসা আল্লাহ্ তা’আলার,

নিজের দ্বীনি কর্মকান্ডে অপূর্ণতার কথা স্বীকার করা; নিজেকে নিয়মানুবর্তী আর শৃংখলিত করায় প্রথম একটি ধাপ। যে নিজের প্রচেষ্টায় অপূর্ণতা স্বীকার করে, সে নিজের আত্ম-শৃংখলার পথে চলতে শুরু করলো।

এই স্বীকারোক্তি হলো আমাদের নিজেদেরকে শৃংখলিত আর অটল থাকার ক্ষেত্রে একটি উপাদান । আর এ স্বীকারোক্তি দেয়া যেনো আপনাকে আত্ম-শৃংখলা থেকে বিরত না রাখে। কেননা এটা আপনার প্রতি আল্লাহ্’র মমত্ববোধের একটা লক্ষন যে আপনি নিজেকে পরিবর্তন আর উন্নয়নের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। যেমন, আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

 “...আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।“ [সুরা রাদ: ১১]

সুতরাং যে আল্লাহ্’র সন্তুষ্টিকল্পে নিজেকে পরিবর্তনের চেষ্টা করে, আল্লাহ্ তাকে পরিবর্তনে সাহায্য করেন।

প্রত্যেক ব্যক্তি এককভাবে তার নিজের জন্য দায়বদ্ধ, এবং এককভাবেই জববদিহিতার সন্মূখীন হবে। যেমন, আল্লাহ্ তা’আলা বলেন:

“নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডলে কেউ নেই যে, দয়াময় আল্লাহর কাছে দাস হয়ে উপস্থিত হবে না।  তাঁর কাছে তাদের পরিসংখ্যান রয়েছে এবং তিনি তাদেরকে গণনা করে রেখেছেন।কেয়ামতের দিন তাদের সবাই তাঁর কাছে একাকী অবস্থায় আসবে।“ [সুরা মারইয়াম: ৯৩-৯৫]

মানুষ তাকে বলা কল্যাণকর বিষয় দ্বারা উপকৃত হতে পারে না, যদি না এতে তার নিজের সম্পৃক্ততা আর আগ্রহবোধ থাকে। আপনি কি জানেন না, নূহ্ আলাইহিস সালাম আর লুত আলাইহিস সালামের স্ত্রীদের সম্পর্কে, যারা ছিলো দুইজন নবীর গৃহের সদস্যা। চিন্তা করুন, এই নবীরা তাদের স্ত্রীদের সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য কতোটা প্রচেষ্টা চালিয়েছেন; অথচ কতটুকু হিদায়াহ্ [পথনির্দেশিক] তারা লাভে সমর্থ হয়েছে। কেননা, তাদের পক্ষ হতে নিষ্ঠা অনুপস্থিত ছিলো; এজন্যই তাদের বলা হয়েছিলো:

“...এবং তাদেরকে বলা হলঃ জাহান্নামীদের সাথে জাহান্নামে চলে যাও।“ [সুরা তাহরীম: ১০]

অথচ, ফিরআউনের স্ত্রী, যদিও তিনি ছিলেন একজন চরম সীমালঙ্গনকারীর পরিবারের সদস্যা: আল্লাহ্ তা’আলার এক অনন্য উদাহরণ যারা বিশ্বাস স্থাপন করে তাদের জন্য; কেননা তিনি নিজেকে করেছিলেন সংযত।


একজন মুসলিম নিম্নোক্ত উপায়ে নিজেকে শৃংখলিত করতে পারে:

১. আল্লাহ্’র ইবাদাহ্ করা, তার সাথে অটুট সম্পর্ক রাখা আর নিজেকে তার কাছে পরিপূর্ণভাবে সমর্পণ করা। আর এটা অর্জিত হয় ইবাদাহ্ ; অবশ্য পালনীয় বিষয়সমুহের প্রতি মনোযোগী হওয়া আর নিজের অন্তরকে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যকিছু থেকে সম্পর্কছেদ করার মাধ্যমে।

২. বেশী বেশী কুর’আন পাঠ করা, তাদাব্বুর (কুরআনের গভীর চিন্তা-ভাবনা) আর তা বুঝার চেষ্টা করা।

৩. উপকারী দ্বীনি বই অধ্যয়ণ করা, যাতে রয়েছে অন্তরের যত্ন আর পরিশুদ্ধির আলোচনা, যেমন- মাদারিজ আস-সালিকীন। সালাফদের জীবনী পাঠ করা আর তাদের মনোভাব আর আচরন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা।

৪. শিক্ষামূলক বিষয়ে অংশগ্রহণ করা : যেমন ক্লাস আর লেকচার।

৫. নিজের সময়ের যথার্থ ব্যবহার করা এবং সময়কে এমন উপকারী কাজে ব্যবহার করা; যা দুনিয়া আর আধ্যাত্মিকতা উভয় ধরনের উন্নতি সাধন করে।

৬. অনুমতিযোগ্য অপ্রয়োজনীয় বিষয়ে আসক্ত না হওয়া আর তাতে খুব বেশী মনযোগ না দেয়া।

৭. সৎকর্মশীলদের সঙ্গে থাকা আর সৎসঙ্গের সন্ধান করা, যারা সৎকর্মে সহায়তা করবে। কেননা, যারা একাকী থাকে তারা অন্যকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়া, সবর ইত্যাদি গুণাবলী রপ্ত করতে সমর্থ হয় না।

৮. যে ইলম অর্জিত হয়েছে তার উপর আ’মালের প্রচেষ্টা করা।

৯. নিজেকে গভীরভাবে নিরীক্ষণ করা।

১০. আল্লাহ্’র জন্য পর্যাপ্ত কাজ করা হচ্ছে না; এই মর্মে নিজেকে তাগাদা দেয়া। প্রচেষ্টার পাশাপাশি এ কথা মনে রাখতে হবে, প্রচেষ্টা কখনো যথেষ্ট নয়।

১১. শরীয়াহ্’র সীমারেখা অনুযায়ী নিজেকে বিরত কিংবা বিচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করা।

১২. সবসময় লোকজনের সংশ্রবে না থেকে নিজের জন্য একাকী কিছু সময় বের করা; যাতে ইবাদাহ্ আর আত্মসমালোচনার ফুরসত মিলে।

আল্লাহ্’র কাছেই আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি; যাতে আমরা নিজেদের শৃংখলিত আর সংযত করতে পারি আর আল্লাহ্’র কাছে সমর্পণ করতে পারি যেভাবে তিনি সন্তুষ্ট হন আর ভালবাসেন। আল্লাহ্ তা’আলা তার ছ্বলাত আর সালাম বর্ষণ করুন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার পরিবার আর সাহাবাদের উপর।


[এই স্মরণিকা সবার আগে নিজের জন্য।]
কৃতজ্ঞতা: IslamQA এর একটি প্রশ্নোত্তর

No comments:

Post a Comment